মো. ওয়াহিদ উদ্দীন তালুকদার রাজবাড়ী জেলার সদর উপজেলাধীন সুলতানপুর ইউনিয়নের সুলতানপুর গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে ১৯৪৪ খ্রিষ্টাব্দের ১লা মার্চ মো. ওয়াহিদ উদ্দীন তালুকদার জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মো. আনছার উদ্দীন তালুকদার, মাতা বিবিজাননেছা। পিতা-মাতার কণিষ্ঠ সন্তান হওয়ায় বাবা মা তাঁকে আদর করে মণি বলে ডাকতেন।
|
শিক্ষা জীবনঃ
পার্শ্ববর্তী পরানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করে মাধ্যমিক শিক্ষা লাভের জন্য ১৯৫৭ খ্রিষ্টাব্দে শিবরামপুর আর ডি একাডেমীতে ভর্তি হন। এখান থেকেই ১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দে মেট্রিক পাশ করে সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ, ফরিদপুর থেকে ১৯৬৪ খ্রিষ্টাব্দে আই.এ এবং ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দে বি.এ পাশ করেন। ১৯৮৯ খ্রিষ্টাব্দে দূরশিক্ষণ থেকে অর্জন করেন বি.এড ডিগ্রী।
পারিবারিক জীবনঃ মেট্রিক পাশের পরেই একই গ্রামের ধনাঢ্য ঠাকুর বাড়ির মোঃ জালাল উদ্দিন ঠাকুরের জ্যেষ্ঠ কন্যা মাজেদা বেগমের সাথে তাঁর বিয়ে হয়। স্ত্রীর অনুপ্রেরণাতেই তাঁর শিক্ষা জীবন অব্যাহত থাকে।
কর্মজীবনঃ তার আজীবনের লালিত স্বপ্ন ছিল অনগ্রসর সমাজের পিছিয়েপরা জনগোষ্ঠীকে শিক্ষার পরশপাথরের স্পর্শে উন্নত জীবন দান করা। তাই, তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগের অফিসার পদে যোগদানের মাধ্যমে তাঁর কর্মজীবন শুরু হলেও চাকুরির বাঁধা ধরা বেড়াজাল তাকে আটকে রাখতে পারেনি।
বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাঃ তিনি এলাকার মানুষের শিক্ষার দূরাবস্থার দিকটি সমস্ত অন্তকরণ দিয়ে অনভব করেন। তাই হাফেজ মো. জয়নাল আবেদীন সহ অন্যান্য গণ্যমান্য ব্যাক্তিবর্গের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে সকলের আর্থিক সহযোহিতায় এই বিদ্যালয়টি স্থাপন করেন। এলাকার কয়েকজন মহতি ব্যাক্তি তাদের জমি, আর্থিক সামর্থের হাত প্রসারিত করে, কেউ বিনা পারিশ্রমিকে পাঠদানের মত মহান কর্মে নিজেকে সংযুক্তের মাধ্যমে জ্ঞানালয়টিকে একটি দৃঢ় ভিত্তি দান করেন।
তিনি তার সবল ও সাবলিল নেতৃত্ব এবং সর্বদা সময়োচিত সিদ্ধান্ত গ্রহনের দ্বারা একাধারে ০১/০১/১৯৭০ খ্রি. থেকে ১৯/১০/১৯৯৮ খ্রি. পর্যন্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে বিদ্যাপীঠটিকে উপজেলার একটি স্বনামধন্য পাঠশালায় রুপদান করেন।
তার পরিবারের সকলে আমেরিকাতে অবস্থানের কারণে ১৮/১০/১৯৯৮ খ্রি. থেকে তিনিও সেখানে অবস্থান করেন। এর মাঝে ০১/০১/২০০০ খ্রি. থেকে ১৮/০৬/২০২২ খ্রি. এবং ০১/০৭/২০০৩ খ্রি. থেকে ০১/১২/২০০৩ খ্রি. পর্যন্ত দেশে থেকে বিদ্যালয়টি পরিচালনা করেন। পরে ০২/১২/২০০৩ খ্রি. তারিখের পর আমৃত্যু তিনি আমেরিকাতেই পরিবারের সাথে অবস্থান করেন।
মৃত্যুকালঃ প্রবাসে অবস্থানকালে তিনি ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। দীর্ঘদিন আমেরিকার উন্নত চিকিৎসায় তিনি জীবন অতিবাহিত করেন। স্রষ্টার অমুক ডাকে ২০১৭ খ্রি. ১৭ জানুয়ারি তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যবৃন্দ (স্ত্রী ও তিন সন্তান) এখন আমেরিকাতেই অবস্থান করছেন।
তিনি ছিলেন অন্যন্ত বিনয়ী, দয়ালু, ও পরোপকারী।প্রতিষ্ঠানে দায়িত্ব কালীন তিনি অসংখ্য ছাত্র-ছাত্রীদের বিনা বেতনে/ অর্ধবেতনে পড়ালেখার সুযোগ করে দিয়েছেন। পার্শ্ববর্তি বিদ্যালয়ের তুলনায় অত্র বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিনা বেতনে পড়ার সুযোগসহ ও অন্যান্য ফি সবসময় কম ধার্য করতেন। তিনি ছিলেন একজন সমাজ সচেতন, স্বল্পভাষী ও অসাম্প্রদায়িক ব্যাক্তিত্বের অধিকারী। রাজনীতির সাথে তার সম্পৃক্ততা না থাকলেও সর্বদা প্রগতিশীল রাজনীতির সমর্থক ছিলেন তিনি।
সুলতানপুর ইউনিয়নবাসি চিরকাল এই মহান ব্যাক্তির অবদানকে কৃতজ্ঞচিত্তে স্বরণ করবে।